বাঘের জন্য বক্সায় নিষিদ্ধ পিকনিক

 

আলিপুরদুয়ার:

  পাছে বাঘমামা বিরক্ত হন, সেই আশঙ্কায় শীতের উৎসবের দিনগুলিতে বনভোজনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ফলে বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষে এ বার বক্সার জঙ্গলে আর চড়ুইভাতির আয়োজন করতে পারবেন না পিকনিকপ্রিয় আমুদেরা। সঙ্গে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে মাইক ও ডিজে ব্যবহারের উপর। তার পরও যদি কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করেন, তাঁকে চড়া মাশুল গুনতে হবে। সঙ্গে জুটবে আইনের পরোয়ানাও।

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা বুদ্ধরাজ শেওয়া বলেন, 'আমরা অতীতে হাঁটতে চাইছি না। বাঘের সুরক্ষার প্রশ্নে কোনও রকম আপোষ করা হবে না। ফলে পিকনিক তো দূরের কথা, জঙ্গলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্যাকেটজাত খাবার নিয়ে আসার উপরেও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কোনও ভাবেই মাইক ও ডিজে বাজানো যাবে না। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।'

গত ১১ জানুয়ারি রাত বারোটার পর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের গভীরে পাতা ক্যামেরা ট্র্যাপে প্রথম ধরা পড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। যা দীর্ঘ ২৩ বছরের বিতর্কে জল ঢেলে দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই ওই বাঘের সুরক্ষার প্রশ্নে আর নতুন কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ বনকর্তারা। অরণ্যের নিস্তব্ধতাকে আঁটোসাটো করতে প্রায় ধনুক ভাঙা পণ করেছে বন দপ্তর। রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাজ্য সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিশেষ দল তৈরি করে জঙ্গল জুড়ে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। তবে পদে পদে বাঘটিকে অনুসরণ করার বিষয়েও পিছিয়ে এসেছে বন দপ্তর। বনকতারা মনে করছেন তাতে এই বাঘের বিরক্তি বাড়তে পারে। আর পিকনিকের মরসুমে একবার অনুমতি দিলে স্থানীয় ও জেলার দূরদূরান্ত থেকে হামলে পড়তে পারেন মানুষ। রান্না করে খাওয়া তো দূরস্ত, প্যাকেটজাত খাবার নিয়েও বক্সার জঙ্গলে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে।

ফি বছর শীতের আমেজ গায়ে মেখে বক্সার জঙ্গলের ইতিউতি পিকনিকের আসর জমাতেন বহু মানুষ। কিন্তু ওই অরণ্যে বাঘের আগমন সুনিশ্চিত হওয়ায় এবার আপামর বাঙালির ওই পিকনিক উৎসব পালনে জল ঢেলেছে বন দপ্তর। বক্সার ৭৬০ বর্গকিলোমিটার জঙ্গলের ভিতরে তো নয়ই, সংলগ্ন এলাকাগুলিতেও যাতে কেউ পিকনিকের পসরা জমাতে না পারে, সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই নজদারি বাড়িয়ে দিয়েছে বক্সা কর্তৃপক্ষ। বক্সার জঙ্গলের কোর এলাকায় না হলেও জঙ্গল সংলগ্ন চার পাশে প্রচুর সরকারি ও বেসরকারি পিকনিক স্পট রয়েছে। যেখান থেকে প্রতি বছর পিকনিকের মরসুমে মোটা টাকা রোজগার করতেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। কিন্তু এ বার বন দপ্তরের ফরমানে পিকনিকে নিষেধাজ হওয়ায় ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বনজন শ্রমজীবী মঞ্চের উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক লালসিং ভূজেল বলেন, 'প্রতি বছর পিকনিকের আসরে যে ভাবে মদ্যপান করে পরিবেশকে দূষিত করা হতো, এ বার বন দপ্তরের নিষেধাজ্ঞায় তাতে অবশ্যই লাগাম পড়বে। তাতে আর্থিক ক্ষতি হলেও আমরা বাঘের সুরক্ষার প্রশ্নে বন দপ্তরের সঙ্গেই রয়েছি।

*এই সময় প্রতিবেদন*